বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

এই দেশটা কি ধর্ষকের?

এই দেশটা কি ধর্ষকের?
রূপা মেয়েটার কথা পড়তে পড়তে চোখ ভিজে যায়।
মনের ভেতর হাহাকার করে। একটা অসহায়ত্ব বোধ কাজ
করে। একটা মেয়ে কী নির্মমভাবে ধর্ষিত হলো! কী
নৃশংসভাবে খুন হলো! এভাবে আর কত মেনে নেওয়া
যায়? কত আর সহ্য করা যায়? কী সংগ্রামী আর
আত্মপ্রত্যয়ী একটি মেয়ে। কষ্ট করে পড়াশোনা
করেছে। সংসারের খরচ চালিয়েছে। মেয়েটার স্বপ্ন
ছিল আইনজীবী হবে। কৃষকের ঘরে জন্মে যে দুঃখ
বয়ে বেড়িয়েছে, সেটা ঘুচানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল
মনে। আর এই মেয়েটা প্রাণ দিল কতগুলো বর্বর, নরাধম,
পাষণ্ডের হাতে! হে মঙ্গলময়, এই বর্বরতার শেষ
কোথায়!
মৃত্যুর আগে মেয়েটা খুব চিৎকার করছিল। বাঁচার জন্য কত
আকুতি ছিল তাঁর। কত মিনতি নিশ্চয় করেছিল। মেয়েটা খুব
বাঁচতে চেয়েছিল। পশুগুলো তাঁকে ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত
হয়নি, নিষ্পাপ মেয়েটাকে খুন করেছে। তিলে তিলে গড়া
একটা সোনালি জীবন ধ্বংস করে দিল কিছু নরকীট!
মেয়েটার পরিবার কি করে সইবে এই ব্যথা!
মেয়েটাতো বাংলাদেশের মানচিত্র এঁকে বড় হয়েছিল।
দেশের পতাকা এঁকে বড় হয়েছিল। লাল-সবুজের পতাকার
দিকে তাকিয়ে ঋজু শিরে, মাথা উঁচু করে সালাম দিয়েছিল।
মেয়েটা এই দেশটাকে ভালোবাসত। ভাষা দিবসে নিশ্চয়
ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে যেত। বাংলাদেশের খেলা
দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে যেত। মৃত্যুর দিনও হয়তো,
ক্ষণে ক্ষণে দেশের খেলার খবর রেখেছে সে।
বাংলাদেশ নিয়ে তাঁরও নিশ্চয় স্বপ্ন ছিল। ক্রিকেট খেলা
দেখে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার করত। দেশের
পরাজয়ে নিশ্চয় খুব মন খারাপ হতো তাঁর। মেয়েটা তাঁর
মাকে ভালোবাসত। দরিদ্র দুঃখিনী মায়ের জন্য চিন্তা করত।
মায়ের জন্য টাকা পাঠাত। কী দোষ ছিল মেয়েটার? অথচ
এই সমাজ মেয়েটিকে উপহার দিয়েছে ধর্ষণ। তারপর
মৃত্যু। এরপর কবর খুঁড়ে লাশ উদ্ধার! পোস্টমর্টেম!
একটা মেয়ে রাস্তায় হাঁটতে পারে না। একা চলতে পারে না।
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে পারে না। তার কোনো স্বাধীনতা
নেই। একটা মেয়েকে আমরা মানুষ মনে করি না। কী
জঘন্য আমরা! কী অসভ্য আমাদের রুচি! দুনিয়ার আর
কোনো দেশের মেয়েরা এত অনিরাপদ? ইউরোপ-
আমেরিকায় মেয়েরা দ্বিধাহীন চিত্তে, নিঃসংকোচে
হেঁটে বেড়ায়। কী সন্ধ্যা, কী মধ্যরাত। একা একা বাসায়
ফিরছে। অর্ধ বসনে তারা চলছে। নিজের ভালো লাগা
নিয়ে জীবন উপভোগ করছে। কেউতো তাদের পিছু
পিছু হায়নার মতো ছোবল দেয় না। কেউতো তাদের
নেকড়ের মতো থাবা দেয় না। আমাদের সমাজটা কেন
এমন হলো? কেন একটি মেয়ে রাস্তায় নিরাপদে চলতে
পারবে না? কেন?
প্রায় প্রতিদিন ধর্ষণ হচ্ছে। ধর্ষণ করে অনেক
মেয়েদের হত্যা করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এই
দেশটাতে কোনো পুলিশ নেই। নিরাপত্তা দেওয়ার কেউ
নেই। আইন নেই। বিচার নেই। মেয়েগুলোর পাশে
দাঁড়ানোর কেউ নেই। কয়টা ধর্ষণের বিচার হয়? কয়টা ধর্ষক
ফাঁসিতে ঝোলে? উল্টো একটি ধর্ষিত মেয়েই
সমাজে অবহেলিত হয়। লোকলজ্জার ভয়ে চুপসে
থাকে। দেশটাতে যেন ধর্ষকেরই জয়!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ক্রিকেট খেলাকে
সাপোর্ট দেওয়ার জন্য মাঠে যান। সে দৃশ্য দেখে
আমাদের চিত্ত পুলকিত হয়। আমরা আনন্দে নেচে উঠি।
কিন্তু আপনি যদি একটি ধর্ষিতার পাশে দাঁড়াতেন, যদি একটি ধর্ষিত
নারীর পরিবারের পাশে দাঁড়াতেন, আমাদের চিত্ত বহুগুণে
পুলকিত হতো। আমরা আনন্দে আত্মহারা হতাম।
বহু দেশ ক্রিকেট না খেলেও দুনিয়ায় সেরা। ক্রিকেট না
খেলেও তারা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ক্রিকেট না
খেলেও শত শত বছর ধরে, সৃষ্টিতে ওরা
অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সেসব দেশের নারীরা নিরাপদ। সেসব
দেশের মানুষ নিরাপদ। যে দেশের অর্ধেক
জনগোষ্ঠী প্রতি মুহূর্তে ধর্ষণ আর নির্যাতনের ভীতি
নিয়ে কাটায়, সে দেশ শুধু ক্রিকেট দিয়ে পৃথিবীতে
দাঁড়াতে পারে না। ধর্ষিতার অভিসম্পাতে সে সমাজ পিছিয়ে
থাকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ক্রিকেট একটা খেলা মাত্র। স্রেফ
একটা বিনোদন। আর আমাদের মেয়েগুলো, এ দেশের
সম্পদ! সম্পদকে অবহেলে, আমরা কোনো দিন
এগিয়ে যেতে পারব না। দেশটাকে ধর্ষকের হতে
দেবেন না, প্লিজ!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বন্দরবাজারে সংঘর্ষের ঘটনার পুলিশের মামলা #আলোকচিত্রী :মুছলিম আলী

নিজস্ব প্রতিবেদক :: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর সিলেটের বন্দর বাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি-ছাত্রদলে...